দেশে মোবাইল ব্যাংকিং লেনদেন রীতিমতো বিপ্লব ঘটিয়েছে। দৈনিক লেনদেন এক হাজার ৮৪৬ কোটি টাকা। মাসে লেনদেন ৫৭ হাজার কোটি টাকা। দরিদ্র ও ব্যাংকিং সেবাবহির্ভূত জনগণকে ব্যাংকিং সেবা প্রদান করার লক্ষ্যে এবং প্রবাসীদের কষ্টার্জিত অর্থ দ্রুত, সহজ ও নিরাপদে গ্রামীণ এলাকায় বসবাসরত উপকারভোগীদের কাছে পৌঁছানোর জন্য ২০১০ সালে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের কার্যক্রম শুরু করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্যোগে ব্যাপকভাবে সাড়া দিয়েছে তফসিলি ব্যাংকগুলো। যার ফলে মোবাইল ব্যাংকের গ্রাহক সংখ্যা নতুন মাত্রা পেয়েছে। ইতোমধ্যে অতিক্রম করেছে ১০ কোটি গ্রাহকের মাইলফলক। উল্লেখ্য, ব্যাংকিং সেবার অপব্যবহার ঠেকাতে বাংলাদেশ ব্যাংক কড়াকড়ি আরোপ করেছে। ইতোমধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মোবাইল এ্যাকাউন্ট বন্ধ করা হয়েছে। যে কোন কার্যক্রম চালাতে হয় নিয়মনীতির মধ্যে। এখানে অস্বচ্ছতা ও অপব্যবহারের কোন সুযোগ নেই। প্রতারণার ঝুঁকি এড়াতে এবং সাইবার হ্যাকিং রোধে নেয়া হয়েছে ব্যবস্থা। তবু সবসময় সতর্ক থাকতে হবে সংশ্লিষ্ট সবাইকে। বাংলাদেশ ব্যাংক দেশের ২০টি ব্যাংককে মোবাইল ব্যাংকিং করার অনুমোদন দিলেও ১৫টি ব্যাংক বর্তমানে এ কার্যক্রম চালু করেছে। এর মধ্যে ব্র্যাক ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ‘বিকাশ’ এবং ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের ‘রকেট’ মোবাইল ব্যাংকিং এ সেবায় এগিয়ে রয়েছে। সরকারী ডাক ব্যবস্থায় নতুন চালু হওয়া ‘নগদ’ নামের মোবাইল ব্যাংকিং ইতোমধ্যে আস্থা অর্জন করেছে। বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ইতিবাচক ব্র্যান্ডিংয়ে মোবাইল ব্যাংকিং বা এমএফএসের (মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। গ্রাহক সংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান বর্তমানে বিশ্বে শীর্ষস্থানীয় বলে গণ্য করা হয়। সব শ্রেণী-পেশার মানুষ এ সেবার সুফল ভোগ করছে। সবচেয়ে বেশি উপকৃত হয়েছে শ্রমজীবী মানুষ। ফেরিওয়ালা বা ফুটপাথের দোকানদার, মুটে-মজুর, বাস-ট্রাকের ড্রাইভার, রিক্সাওয়ালা সারাদিন পরিশ্রম করে বিকেলবেলা কোন এজেন্টের কাছে গিয়ে বিকাশ করে টাকা পাঠিয়ে দিতে পারেন বাড়িতে। তারা দেখছেন, স্ত্রী-পরিবার নিরাপদে টাকা পেয়ে যাচ্ছে। পোশাক কারখানার লাখ লাখ নারী কর্মী মোবাইলে বেতন পান। তার একটা অংশ মোবাইলেই গ্রামে পাঠান। টাকা পাঠান বুয়া বা গৃহকর্মীরা পর্যন্ত। এটা অনস্বীকার্য যে, মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে গ্রামীণ অর্থনীতিতে প্রভূত গতি সঞ্চার হয়েছে। প্রবাসীদের প্রেরিত অর্থ গ্রামের আত্মীয়স্বজনের কাছে সরাসরি পৌঁছে দিতে মোবাইল ব্যাংকিং ভূমিকা রাখছে। সিম রেজিস্ট্রেশন হওয়ায় মোবাইল ব্যাংকিংয়ের ক্ষেত্রে নিরাপত্তা বেড়েছে। আর্থিক লেনদেনের ক্ষেত্রে দেশে মোবাইল ব্যাংকিং অর্জন করেছে ব্যাপক জনপ্রিয়তা। নগদ টাকা বহন করা সর্বদাই ঝুঁকিপূর্ণ। কারও কাছ থেকে টাকা পেতে ও পাঠাতে আগে অনেক সময় লাগত। দেশে মোবাইল ব্যাংকিং দ্রুত টাকা প্রাপ্তি ও পাঠানোর অবাধ সুযোগ করে দিয়েছে। তবে প্রযুক্তিনির্ভর এই লেনদেনের কিছু ঝুঁকিও রয়েছে। এসব ক্ষেত্রে গ্রাহকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা জরুরী। প্রযুক্তি এখন রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের হাতিয়ার। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে দেশে ব্যাপক অর্থনৈতিক উন্নয়ন হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে মোবাইল অপারেটররা উন্নয়নের অন্যতম অংশীদার। তারা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের গ্রাহকদের আস্থা অর্জনে সফল হয়েছে। আমরা আশা করব, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দিকনির্দেশনা ও নিয়মনীতি মেনেই দেশে মোবাইল ব্যাংকিং আরও বিকশিত হবে এবং দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখায় এটি আরও কার্যকর ভূমিকা রাখতে সমর্থ হবে।
Leave a Reply